বিসিএস ভাইভা প্রস্তুতি – BCS Viva Preparation

বিসিএসের ভাইভা পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ এই পরীক্ষার ফলাফল আপনার ক্যাডার নির্বাচন এবং ভবিষ্যতের ক্যারিয়ারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মৌখিক পরীক্ষায় ২০০ নম্বর বরাদ্দ থাকে, যেখানে পাস করতে হলে অন্তত ১০০ নম্বর পেতে হয়। ভাইভা বোর্ডের কাছে ভালো প্রভাব সৃষ্টি করা এবং সফলভাবে পরীক্ষা শেষ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভাইভা বোর্ডে ভালো করার জন্য অনেক প্রস্তুতি ও টিপস রয়েছে, যা আপনি অনুসরণ করলে ভালো ফলাফল আশা করতে পারেন। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক ভাইভাতে ভালো করার উপায় সম্পর্কে জেনে নিই।
১. নিজের পরিচয় সম্পর্কে প্রস্তুতি
ভাইভা পরীক্ষার শুরুতে সাধারণত আপনার পরিচয় সম্পর্কে প্রশ্ন করা হতে পারে। আপনি কি কোথায় জন্মগ্রহণ করেছেন? আপনার পরিবার? শিক্ষাগত যোগ্যতা? পছন্দ-অপছন্দ? জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য? ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে যেতে হবে। খুব ভালোভাবে চিন্তা করে ২০০ শব্দের মধ্যে আপনার পরিচয় লিখে গুছিয়ে রাখতে হবে। এটি এমনভাবে হতে হবে যেন ভাইভা বোর্ডে সুন্দর উপস্থাপনা করতে পারেন। সহজ, মার্জিত এবং আত্মবিশ্বাসী প্রকাশভঙ্গি অনুসরণ করলে আপনি অধিক নম্বর পেতে সক্ষম হবেন।
আরো পড়ুনঃ BNCC এর অফিস সহকারী পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তর
২. নিজের জেলার তথ্য জানুন
বিসিএস ভাইভাতে আপনার জেলার ব্যাপারে অনেক প্রশ্ন করা হয়। তাই আপনার জেলা সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানুন। এই প্রশ্নে আপনার জেলার প্রতিষ্ঠা? নামকরণ? মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস? বিখ্যাত সিভিল সার্ভিস কর্মকর্তা? নদী? দর্শনীয় স্থান? মুক্তিযুদ্ধের সময় সেক্টর নম্বর ইত্যাদি ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে। বাংলা একাডেমি থেকে আপনার জেলার ওপর প্রকাশিত বইটি অনেক সাহায্য করতে পারে। এমনকি, মুক্তিযুদ্ধের সময়কার সেক্টর কমান্ডারের নামও জানা দরকার।
৩. পঠিত বিষয় ও সিলেবাস সম্পর্কে ধারণা
বিসিএস ভাইভাতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের পঠিত বিষয় নিয়ে অনেক প্রশ্ন করা হয়। বিশেষ করে লিখিত পরীক্ষার সিলেবাসের অংশ, ফিল্ডওয়ার্ক, গবেষণাপত্র ইত্যাদি বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে। আপনার পঠিত বিষয়গুলোর মৌলিক ধারণা খুব ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে। এছাড়া সঠিকভাবে সিলেবাস পড়ে যাওয়ার মাধ্যমে আপনি ভাইভা বোর্ডকে আপনার জ্ঞানের গভীরতা প্রমাণ করতে পারবেন।
৪. নিয়মিত পত্রিকা পড়ুন
বিসিএস ভাইভা পরীক্ষায় বিশ্ব ও বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি নিয়ে আলোচনা করা হয়। তাই আপনি নিয়মিত একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি পত্রিকা পড়ুন। এতে আপনাকে সাম্প্রতিক বিষয়ে জ্ঞানের আধিক্য থাকবে, যেমন সরকারী বাজেট, অর্থনৈতিক সমীক্ষা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের আগ্রাসন, বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচি ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে আপনার ধারণা বাড়বে।
আরো পড়ুনঃ বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সবাই, নন-ক্যাডার রেজাল্ট
৫. ইংরেজি চর্চা
বিসিএস ভাইভা পরীক্ষায় কিছু প্রশ্ন ইংরেজি ভাষায় করা হয়। এজন্য আপনি ইংরেজি কথোপকথন এবং ভাষাগত দক্ষতা চর্চা করে যেতে পারেন। ইংরেজি চর্চা ভালোভাবে করলে ভাইভাতে ইংরেজি প্রশ্নে সঠিক উত্তর দিতে সুবিধা হবে এবং ভাইভা বোর্ডের কাছে আপনার আত্মবিশ্বাসের প্রমাণও হয়ে উঠবে।
৬. ক্যাডার চয়েস লিস্টের প্রস্তুতি
ভাইভায় আপনার ক্যাডার চয়েসের প্রথম তিনটি চয়েস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। ক্যাডার চয়েসের সঙ্গে আপনার একাডেমিক বিষয়ের সম্পর্ক কী, সেটি স্পষ্টভাবে জানলেই আপনি ভালোভাবে ভাইভা বোর্ডকে বোঝাতে পারবেন। এই প্রস্তুতির মাধ্যমে বোর্ডের সামনে আপনার আত্মবিশ্বাস প্রকাশ পাবে।
৭. মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত জ্ঞান
বর্তমানে যেকোনো চাকরির ভাইভায় মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত প্রশ্ন প্রায়ই করা হয়। তাই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বাংলাদেশের জাতীয় দিবস, জাতীয় চার নেতা এবং বাংলাদেশের সংবিধান সম্পর্কিত তথ্য জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব বিষয় গভীরভাবে পড়লে আপনার আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে এবং ভাইভায় আপনাকে এগিয়ে রাখবে।
৮. বোর্ডের মনস্তত্ত্ব বোঝা
বিসিএস ভাইভা বোর্ডের সদস্যদের মনস্তত্ত্ব বোঝার চেষ্টা করুন। প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে অপ্রাসঙ্গিক তথ্য না দিয়ে মূল পয়েন্টগুলো সরাসরি বলতে হবে। কোনো প্রশ্নের উত্তর না জানলে বিনয়ের সঙ্গে অপারগতা প্রকাশ করুন। ভাইভা বোর্ডের সঙ্গে কখনোই তর্কে জড়াবেন না। যেকোনো প্রশ্নের উত্তর হাসিমুখে, আত্মবিশ্বাসীভাবে এবং সুস্পষ্টভাবে দিন। বিষয়ভিত্তিক আই কন্টাক্ট রাখাও জরুরি।
৯. মক ভাইভায় অংশগ্রহণ
আপনি যদি ভাইভা পরীক্ষার আগে কিছু মক ভাইভায় অংশগ্রহণ করেন, তবে ভাইভা পরীক্ষার ভয় ও সংকোচ অনেক কমে যাবে। এতে আপনি ভাইভা বোর্ডের সামনে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবেন এবং পরীক্ষার পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ সাপ্তাহিক চাকরির খবর পত্রিকা
১০. ব্যক্তিত্ব, বিনয় এবং স্মার্টনেস
ভাইভা বোর্ডে শুধুমাত্র জ্ঞানের গভীরতা নয়, বরং আপনার ব্যক্তিত্ব, যোগাযোগ দক্ষতা, মানসিক পরিপক্বতা, বিনয় এবং সৌজন্যতা যাচাই করা হয়। সুতরাং আপনার আত্মবিশ্বাসী ও সৌজন্যমূলক আচরণ ভাইভাতে পাস করতে সাহায্য করবে।
আমাদের শেষ কথা
বিসিএস ভাইভা পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হওয়ার সময় আপনার সমস্ত প্রস্তুতি গুছিয়ে নিয়ে অবশ্যই আত্মবিশ্বাসী ও মার্জিত উপস্থাপনা করুন। শুধু জ্ঞান নয়, আপনার ব্যক্তিত্বও ভাইভায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনাকে কোনো প্রশ্নের উত্তর জানলে সঠিকভাবে দিন, আর জানলে বিনয়ের সঙ্গে জানিয়ে দিন। সবশেষে, ইতিবাচক মনোভাব এবং আত্মবিশ্বাসী দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রেখে আপনি সফলভাবে ভাইভা পরীক্ষা পার করতে পারবেন। এবং বিসিএস ভাইভা প্রস্তুতি – BCS Viva Preparation সম্পর্কিত কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জানাতে পারেন।